আমার সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার গল্প

Mohaiminul Islam Amit

Mohaiminul Islam Amit

June 1, 2023

সময়টা ২০২০ সাল, করোনা মহামারির কারণে স্কুল, কলেজ সবকিছু বন্ধ হয়ে যায় এবং অনলাইনে ক্লাসের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন আমি কেবল নবম শ্রেণিতে ওঠি। করোনা ভাইরাসের কারণে অনলাইনে ক্লাস করতাম বিশেষ করে ইউটিউবে ক্লাস বেশি করা হতো। তখন আমার ওয়াইফাই কানেকশন ছিল না, মোবাইলে এমবি কিনে ক্লাস করতাম। আমি আগে থেকেই ইন্টারনেটে অনেক ঘাটাঘাটি করতাম বিশেষ করে ইউটিউবে। তখন শুধু ভিডিও দেখা হতো। একদিন ইউটিউবে ভিডিও দেখার সময় একটি ভিডিও আমার সামনে আসলো একজন ইউটিউবার ইউটিউব থেকে তার ইনকাম সম্পর্কে বলছেন। তো এই ভিডিওটা দেখে আমার আগ্রহ জাগল যেহেতু আমি অনলাইনে অনেক সময় স্পেন্ড করি তাই ভাবলাম সময়টাকে কাজে লাগানো যাক।

যেই ভাবা সেই কাজ, আমি মোবাইল দিয়েই শেখা শুরু করে দিলাম ভিডিও এডিটিং যেহেতু ইউটিউবে ভিডিও দিতে গেলে ভিডিও এডিটিং জানতে হবে। তখন কাইন মাস্টার এপ দিয়ে ভিডিও এডিটিং করি। প্রথমে ফোকাস দিই ইনফোগ্রাফিক কন্টেন্টের উপর। তো তখন আমার ইন্টারনেটের অনেক প্রয়োজন হয়, বাবাকে বলেছিলাম ওয়াইফাই কানেকশন এনে দিতে তখন রাজি হননি এমবি কিনে ক্লাস করতে বললেন। তখন আমার প্রচুর এমবি লাগছিল কারণ অনেক ফুটেজ এবং এপ ডাউনলোড দিতে হচ্ছিল, আর ক্লাস করতে তো এতো এমবি লাগে না। তখন আমার ফ্যামিলিকে জানতে দিতে চাইনি যে আমি ইউটিউবিং করছি।  

তো আমার পাশের বাসায় ওয়াইফাই ছিল সেটা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডরের একটি কানেকশন ছিল। আমি ইউটিউবে ওয়াইফাই হ্যাকিং শিখি এবং অনেক চেষ্টা করার পর সেই কোম্পানির ওয়াইফাই হ্যাক করে ফেলি। এখন আমার সাথে পায় কে! কিন্তু সমস্যাটা ছিল আমার রুম থেকে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলো না এবং আমরা থাকতাম দুতলায়, সেই কারণে বাসার সিঁড়িতে বসে ডাউনলোড করতাম ক্লাস এবং যা কিছু প্রয়োজন এডিটিং এর জন্য। এরপর ভিডিও মেক করি এবং এভাবে ৩ টা ভিডিও আপলোড করি ইউটিউবে। তখন ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন যেমন: সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন(এসইও), থাম্বনেইল ক্রিয়েশন ইত্যাদি সবকিছু আমি শিখে ফেলি। তখন এসইও করি মোবাইল দিয়েই!

তো এভাবেই কয়েক মাস পর বাবাকে রিকোয়েস্ট করার পর ওয়াইফাই এনে দেন। তো ওয়াইফাই নেয়ার পর থেকে আমি আমার কম্পিউটারে ক্লাস করি পাশাপাশি ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখি ইউটিউব মার্কেটিং সম্পর্কে। অনেক রিসার্চ করার পর দেখি যে ইউটিউবে চ্যানেল রাঙ্কিং করাটা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই এর প্রতি কম সময় দিতে থাকি। একদিন ইউটিউব ব্রাউজিং করার সময় ফ্রিল্যান্সিং এর একটি ভিডিও আমার সামনে আসে এবং দেখি যে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে ফ্রিল্যান্সিং করলে অল্প সময়ে সফল হওয়া যায় তাই তখন আমি ইউটিউবেই ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা শুরু করে দিই। 

ভালো ভাবে শেখার পর ২০২১ সালে ফাইভারে জয়েন করি ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে। প্রথম অর্ডার পাই গিগ পাবলিশ করার ১৪ দিনের মাথায় যেটার এমাউন্ট ছিল ৩৫ ডলার। আলহামদুলিল্লাহ, ১ বছরের মধ্যেই লেভেল ২ সেলার হই এবং মাত্র ৬৭ টা বায়ার রিকোয়েস্ট রিপ্লাই করে ১৫০ এর অধিক প্রজেক্টস কমপ্লিট করে ফেলি। যেখানে অনেকের শত শত এমনকি হাজার হাজার এপ্লাই করতে হয়। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো ফ্রিল্যান্সিং এ আমার প্রথম কাজটি ছিল ইউটিউব মার্কেটিং-এর যেটি আমি অনেক পরিশ্রম করে শিখেছিলাম। আবারও প্রমাণিত হলো যে পরিশ্রম কখনো বৃথা যায়না, দুনিয়ার সবকিছু বেঈমানি করলেও আপনার করা পরিশ্রম কখনই তা করবেনা।

এই কাজে বায়ার আমার প্রতি এতই খুশি হয়েছিল যে ৫ স্টার রিভিউ তো দিয়েছেই তার সাথে ৫ ডলার টিপও দিয়েছে। ৫ ডলার কোনো বড় বিষয় নয়, এটি একটি সম্মান এবং ক্লায়েন্টের সেটিসফেকশনের কারণ। একজন ক্লায়েন্ট আপনার কাজের প্রতি খুব বেশি খুশি তার হলো প্রমাণ টিপ। এরপর আরো কিছু কাজ করার পর যখন ভালো ফিডব্যাক পাই, এরপর আমাকে আর পিছনে ফিরতে হয়নি। যদিও সামান্য কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল কিন্তু সেগুলো সফল ভাবে ওভারকাম করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমানে আমেরিকার একটি কোম্পানির সাথে মাসিক ভিত্তিতে কাজ করছি এবং ফাইভারের পাশাপাশি ফাইভারের বাহিরে রেগুলার বেসিসে কাজ করছি।

এখন আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কথা বলি আপনি যখন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন তখন আপনার কাছে চারপাশ অন্ধকার মনে হবে, কাজ শেখাটা হবে খুবই তিক্তময়। কিন্তু আপনি যদি ভালো ভাবে এই তিক্ত স্বাদ গ্রহন করতে পারেন তাহলে আপনার জন্য মিষ্টি কিছু অপেক্ষা করছে। অবশ্যই ভালোভাবে কাজ শিখে, জেনে এবং ভালো মানের পোর্টফোলিও মেক করে মার্কেটপ্লেসে আসতে হবে এবং বায়ারের সাথে ভালো ভাবে কমিউনিকেশন জানতে হবে। আর আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এই পরিশ্রম প্রথমে বেশি হবে কিন্তু এরপর আপনি যখন কোনো একটি পর্যায়ে যাবেন তখন আপনি অন্যদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারবেন। আপনার কাজ থাকবে তখন জাস্ট ক্লায়েন্ট ম্যানেজ করা।

আমি যখন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করি, তখন আলহামদুলিল্লাহ সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো কোনো সমস্যা ছিলোনা। শুধু নিজে কিছু করার প্রবল ইচ্ছা থেকেই আজ আমি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। আমাদের সফল হওয়ার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে একটি প্রোপার মাইন্ড সেট। আপনার যদি মাইন্ড সেট ক্লিয়ার থাকে আপনি লাইফে যেকোনো জায়গায় সাকসেস হতে পারবেন। তো আপনার মাইন্ড সেটটা ক্লিয়ার করা খুবই জরুরী যে আমাকে এটা করতেই হবে সফল হতে হলে। 

আমি কিন্তু সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার আগে অনেকবার ব্যার্থ হয়েছি। কিন্তু হাল ছেড়ে দিইনি বরং নিজের ভুলগুলো খুজে বের করে শুধরে নিয়েছি। যদি হাল ছেড়ে দিতাম তাহলে আজ হয়তো এই পর্যায়ে আসতে পারতাম না। আলহামদুলিল্লাহ দামি সেটাপ, ম্যাকবুক, কিবোর্ড সব কিছু এখন আমার। আর আমার বয়স কিন্তু খুব বেশি না মাত্র ১৭ বছর যখন আমি বল্গটি লিখছি। তো আমি যদি অল্প বয়সে সফল হতে পারি তাহলে আপনি কেন পারবেন না? আপনার যদি ধৈর্য, পরিশ্রম এবং প্রবল আগ্রহ থাকে তাহলে আপনিও হতে পারেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার।

সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য প্রয়োজন সঠিক গাইডলাইন এবং সাপোর্ট। অভিজ্ঞ ইন্সট্রাকটর আর ২৪ ঘন্টা সাপোর্ট নিয়ে অমিত ইন্টারন্যাশনাল প্রস্তুত আপনার সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার অগ্রযাত্রায়। আমাদের ফ্রিল্যান্সিং ফ্রি কোর্স দিয়ে শুরু করুন আপনার ক্যারিয়ার। ট্রেনিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

1 thought on “আমার সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার গল্প”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

SHARE
Scroll to Top